“শাশ্বত প্রেম নিকষিত হেম “

“শাশ্বত প্রেম নিকষিত হেম “
-হিরন্ময় গাঙ্গুলী

 

পৃথিবীর আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত,মানব জন্মের ইতিহাস এবং প্রেমের মহিমা কীর্তন এক‌ইসূত্রে গাঁথা । সৃষ্টির প্রথম নর-নারী আদম -ঈভ পরস্পরের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।গন্ধর্ব ফল সেই অন্ধ অমর প্রেমের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভালোবাসা চিরন্তন সত্য এবং শাশ্বত ।বিধাতার এক বিস্ময়কর সৃষ্টি ভালোবাসা।চোখে দেখা যায় না , অন্তরের অন্তঃস্থলে অনুভব করতে হয় ,মনের গভীরে এক কিশলয় বিকশিত হতে হতে মহিরুহে পরিনত হয়। সব মিলিয়ে বিনা সুতোয় গাঁথা এক অদ্ভুত অদৃশ্য বন্ধনের তীব্র টান‌ই ভালোবাসা। জীবনের পরিপূর্ণ পূর্ণতার এক আবশ্যিক আশ্চর্য বিষয়ের অপর নাম ভালোবাসা। মানুষের জীবনে নানান কাজের প্রেরণা ভালোবাসা , কল্যাণকর এবং অকল্যাণকর সব কাজেই ভালোবাসার নিগূঢ় সম্পর্ক ,রাজাকে ফকির ও ফকিরকে রাজার ঐশ্বর্য দান করে , ভালোবাসা‌য় সৃষ্টি করছে শিল্প -সাহিত্য -সভ্যতা , সৃজনশীল কাব্য কাহিনী ,রচেছে অমরাবতী । আবার ডেকে আনে ধ্বংসের অমানিশার পথ ,করেছে বৈরাগী , সন্ন্যাসী, ধর্মান্তর- দেশান্তর -বিদ্রোহী । ভালোবাসা কখনো সমূদ্র ,কখনো বা আকাশের প্রতিবিম্ব স্বরূপ ,আবার আকাশের সীমাহীন শূন্যতার চেয়েও সীমাহীন। এক বিস্ময় ও রহস্যময় এই ভালোবাসা। ভালোবাসা যে পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্লভ এবং আকাঙ্খিত একটি আবেদন।জীবন যে নশ্বর ,দেহ তো পঞ্চভূতে বিলীন হয় , ভালোবাসা যে অমর । সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টি এত মনোরম এত সৌন্দর্য সব‌ই যে ভালোবাসার দান , ভালোবাসার জন্য‌ই পৃথিবী এত সৃষ্টিশীল। বসুন্ধরার বুকে ভালোবাসা যে অমোঘ ।

পৃথিবীতে জীবনে কি প্রয়োজন? আসল দরকারটি কি? আমরা সবাই ধনী হোক, গরীব হোক, মূর্খ হোক, পণ্ডিত হোক সবকিছু নির্বিশেষে আমরা কি চাই? প্রতিটি মানুষ চায় জীবনে আনন্দ। কেউ চায় না দুঃখী হতে, নিরানন্দে থাকতে?কেন মানুষ দুঃখী হতে চায় না? তার কারণ জীবের স্বরূপ হচ্ছে সৎ, চিৎ ও আনন্দ। আমাদের স্বরূপে আমরা নিত্য, জ্ঞানময়, ও আনন্দময়। আমরা নিত্য তাই আমরা মরতে চাই না। আমরা জ্ঞানময় কিন্তু অজ্ঞানের মধ্য রয়ে থাকার দরুন সবসময় জানতে চাই, জানতে চাই। আমরা আনন্দময় কিন্তু নিরানন্দের মধ্য রয়েছি। তাই এখুনি আমাদের অন্বেষণ করতে হবে আনন্দ কিসেতে পাওয়া যায়। আনন্দের উৎসটি কি? আনন্দের উৎস হচ্ছে ভালবাসা। বিভিন্ন লোকে বিভিন্ন বিষয় লাভ করে আনন্দ পেতে পারে। কেউ মিষ্টি খেয়ে আনন্দ পায়, কেউ তেতো খেয়ে আনন্দ পায়, কেউ টক খেয়ে আনন্দ পায়। বিভিন্ন লোকের আনন্দের উৎস বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে কিন্তু তার গোঁড়া কারন হচ্ছে ভালবাসা সবাই আমরা আনন্দ চাই, কি করে আনন্দ পাব? ভালবাসলে আনন্দ পাব। সেই জন্যই আমরা সবাই ভালবাসি, ছেলেকে ভালবাসি, মেয়েকে ভালবাসি, বাবাকে ভালবাসি, দেশকে ভালবাসি, জাতিকে ভালবাসি, ও একে ভালবাসলে একটু আনন্দ পাব। । শুধু এই জম্মে না আমাদের জম্ম জম্মান্তরে এই জগতে প্রতিটি জীবাত্মার শুধু এই অন্বেষন। এখানে এসে অন্বেষন করছে কাকে ভালবাসব? কিন্তু ভালোবাসা যে —–“প্রেমের প্রদীপ শিখা চিরতরে জ্বলে , স্বর্গ থেকে আসে প্রেম স্বর্গে যায় চলে “সত্য অর্থে প্রকৃত ভালোবাসা সেটি স্বর্গ থেকেই আসে আবার স্বর্গে চলেও যায়। মাঝখানের ভাবসম্মিলিত সময়টুকু আলোকিত করে রাখে দুজনের আত্মাকে । ভালোবাসার পরিপূর্ণ সংজ্ঞা আজ পর্যন্ত কেউই বিশ্লেষণ করতে পারেননি। ভালোবাসা নিষ্কাম আর প্রেম স্বকাম ।তথাপি ভালোবাসা ও প্রেমকে এক‌ই আয়নায় দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে ভালোবাসা থেকেই প্রেম জন্ম নিয়েছে। সবার মনেই প্রেম থাকে; ,থাকে ভালোবাসা ; ভালোবাসা শুধু পবিত্র‌ই নয় পূর্ণময়‌ও বটে , নির্দোষ ও পরিশীলিত ভালোবাসা আমাদের ইহকালের শান্তি , স্বস্তি ও পরকালের মুক্তির বৈতরণী।

“নাইবা পেলাম আমার কন্ঠে তোমার কন্ঠহার
তোমায় আমি করব সৃজন এ মোর অহংকার ।”

****নজরুল ইসলাম******

সত্যিকারের ভালোবাসার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির ভালোবাসা।এই ভালোবাসা শ্রদ্ধাশীল , নির্মল শাশ্বত , সুন্দর ও অমলিন ।যে ভালোবাসায় কোন স্বার্থ থাকে না ,সীমা থাকে না, চাওয়া- পাওয়া দ্বন্দ্ব থাকে না সেই ভালোবাসা সত্যিকারের ভালোবাসা। সত্যিকারের ভালোবাসা কোন শক্তির কাছে মাথানত করে না। সত্যিকারের ভালোবাসা ত্যাগের মন্ত্রে দীক্ষিত,যেমন মা-বাবার ভালোবাসা , প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা। প্রেম জীবনকে করে ঐশ্বর্যবান ,হ্নদয়কে করে অসীম , সার্থক ভালোবাসা দুঃখ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পথ , মানুষের জীবনে সব ফুরিয়ে গেলেও ভালোবাসা অবিনশ্বর । ভালোবাসা এক অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ রাখে দুজন মানুষকে। সত্যিকারের ভালোবাসায় দিনের দিন আর্কষণ বাড়তেই থাকে , মনুষ্যত্ব জাগ্ৰত লোপ পায় না , মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। সত্যিকারের ভালোবাসা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে , বিশ্বাস থাকে অটল । সত্যিকারের ভালোবাসা বাহ্যিক সৌন্দর্য নয় , অন্তরের সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে ,থাকে না কোন গোপনীয়তা ,থাকবে শুধু স্বচ্ছতা । সত্যিকারের ভালোবাসা একে অপরের ঘিরেই পৃথিবীর সাজায় সারা পৃথিবী জুড়ে সাজানো থাকে দুজনেই ছবি । অন্য কোন ছবি , সৌন্দর্য চোখেই পড়ে না। পৃথিবীতে যারা সত্যিকারের ভালোবেসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ,তাদের দুজনকে ভালোবাসায় এক করে রাখার মহান দায়িত্ব পালন করেছে।

আসলে প্রকৃত অর্থে প্রেম আসে মনের অজান্তেই ।প্রকৃত অর্থে ভালোবাসার স্বরূপ একটাই ,যেটা পবিত্র ও শাশ্বত প্রেম । পৃথিবীতে ভালোবেসে অমর হয়েছে এমন সাহিত্য- পুরাণ ও বাস্তবজীবনে উল্লেখযোগ্য যুগল :–শিরি -ফরহাদ ,রোমিও- জুলিয়েট (রোম );লাইলি- মজনু ( বাংলাদেশ );প্যারিস -হেলেন( গ্ৰিক );বেহুলা -লখিন্দর (বাংলাদেশ)রাধা —কৃষ্ণ ;(ভারত) ;সাইকি -কিউপিড ;(গ্ৰিক), ভিক্টোরিয়া-আলবার্ট (ব্রিটেন)।

“সুখের রাখিয়া সুখের ও লাগিয়া এঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল ।”সত্যিকারের ভালোবাসায় ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ।মন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে , কিন্তু ভালোবাসাকে নিস্কলঙ্ক রেখেছেন। অপূর্ব সুন্দরী হেলেনের পেমে পড়েছিল গ্ৰীক পুরাণের প্রেমিক পুরুষ প্যারিস ।হেলেন রাজা মেনেলাসের পত্নী । তাদের প্রেমকে মেনে নেয়নি তৎকালীন সমাজ , বর্তমানে যা পরকীয়া প্রেম নামে আখ্যায়িত ।ফলে ধ্বংস হয়েছে ট্রয় নগরী । রাধা কৃষ্ণের প্লেটোনিক প্রেমের মহিমা কীর্তন এই সত্যিকারের ভালবাসার সূত্রে গাঁথা । যুগ যুগ ধরে মানুষ এই প্লেটোনিক প্রেমকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে । প্রেম -ভালোবাসাকে তিন ভাগে ভাগ হয়েছে ,যথা কঠিন ;তরল ; বায়বীয় । সত্যিকারের ভালোবাসা কঠিন পর্যায়ে পড়ে । সত্যিকারের প্রেমের প্রকাশ কম , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন –“যার ভালোবাসা যত গভীরে প্রকাশ করার ক্ষমতা তার তত কম “। সত্যিকারের প্রেমে চিরকুমার বা চিরকুমারী থাকাও যায় । সত্যিকারের ভালোবাসায় কলঙ্ক গ্ৰাস করে না ,অভাগ ,দুঃখ, যন্ত্রণা দৈন্যতা দরজায় টোকা মারলেও জানালা দিয়ে প্রেম পালায় না । অভিমান ,,রাগ -অনুরাগ থাকলেও সত্যিকারের ভালবাসা অমর ।

“তুমি সুখ যদি নাহি পাও /যাও সুখের সন্ধানে যাও ।
আমি তোমারে পেয়েছি হ্নদয়‌ও মাঝে /আরো কিছু নাহি চায় গো ।”

*********রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর*****

কবি নিজে নিজেই স্বয়ং বলেছেন তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে মুক্ত করে দাও ।সে যদি তোমাকে ভালোবাসে তাহলে তোমার কাছে ফিরে আসবে।ডেল কার্নেগি বলেছেন “পৃথিবীতে ভালোবাসার একমাত্র উপায় দান করা , উৎসর্গ করা , প্রতিদানে কিছু না চাওয়া ।সেই ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত ,ত্যাগের গুনে মহিয়ান এই সত্যিকারের ভালবাসা। প্লেটোর মতে প্রেমে পড়ে সকলেই কবি হয়ে যায় । পার্থিব জীবন অপার্থিব সৌন্দর্যের খোঁজে দেউলিয়া হতেও পারে।কি অপূর্ব মহিমা এই সত্যিকারের ভালোবাসায় ।

বিখ্যাত বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্ৰেট একজন পুরুষ হয়ে আর এক পুরুষের প্রেমে হাবুডুবু । এই প্রেম সমকামী । পৃথিবীর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই প্রেমের স্বীকৃতি না পেলেও আদি কাল থেকেই এই প্রেমের চলে আসছে জীবজগতে । অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে‌ও সমকামী প্রেম বর্তমান । প্রাচীন সাহিত্যেও উল্লেখ আছে । সক্রেটিস -আলকিবিয়াড , লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এবং মাইকেলেনজোলা ,রাজা জুলিয়াস সিজার ,জর্জ মাইকেল ।

নারী পুরুষের অবৈধ প্রেম পরকীয়া প্রেম নামে পরিচিত । পৃথিবীতে এই প্রেম স্বীকৃতি নয় , সাহিত্য ,পুরানেও পরকীয়া প্রেম দেখা গেছে । বৃহস্পতির স্ত্রী তারাকে কামনা করেছে চন্দ্র ,সপ্তর্ষির স্ত্রীকে কামনা করেছে অগ্নিদেব ,ভৃগুর স্ত্রী পুলোমাকে কামনা করেছে রাক্ষস ,যযাতিকে কামনা করেছে শর্মিষ্ঠা । দেব -দেবীর এই পরকীয়া কলঙ্ক মুক্ত হলেও বর্তমানে পরকীয়া প্রেম কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছে। প্রেমের মহিমা , প্রেমের সংজ্ঞা এখন ভিন্নতর ।প্রেম আর পবিত্রতার প্রতীক নয় , নির্মম এক পরিহাসের নাম প্রেম -ভালোবাসা। বর্তমান পেমে মানবতার জন্য হ্নদয়ে টান অনুভব হয় না , চাওয়া পাওয়া দ্বন্দ্বে , স্বার্থ চরিতার্থ বেড়াজালে আবদ্ধ ।তথাপি পরকীয়া প্রেম আইনসিদ্ধ ।

কঠিন প্রেম যদি সত্যিকারের ভালোবাসা হয় তবে তরল প্রেম এক প্রহসনের নামান্তর মাত্র। প্রেমের ধর্ম এক হলেও ছলনা ,প্রতারণা অবিশ্বাসের মোড়কে মোড়ানো আধুনিক প্রেম । চাওয়া -পাওয়া; দৈহিক চাহিদা পূরণ , দ্বিধা- দ্বন্দ্ব, স্বার্থ চরিতার্থ করতেই আধুনিক ভালোবাসা ।তরল যেমন যে পাত্রে স্থান পায় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে তদ্রুপ বর্তমান আধুনিক প্রেম । প্রতিহিংসা , প্রতিশোধস্পৃহা ,এক ছেড়ে একাধিক প্রেমের প্রহসন চলছে অবলীলাক্রমে অবৈধ ভাবে । কাম নির্ভর এই সম্পর্কের জেরে মানবতা ,সমাজ সংস্কৃতি চরম বিপন্নতায়। সহনশীলতা বিপন্ন , অবিশ্বাসের দোলাচলে জীবনের অন্তিম পরিণতি‌ই কি সত্যিকারের ভালোবাসা ?দেহ ভোগ , লালসা ভরা কর্দয্য চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে কি প্রেম ? প্রেম শব্দ আজ কলঙ্কিত ,প্রেমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশপ্রেমের নামে দেশপ্রেমের নামাবলী গায়ে দিয়ে চলছে অবলীলাক্রমে দেশদ্রোহিতা ।প্রকৃতিপ্রেমিক আজ প্রকৃতির বুকে নির্মম অত্যাচার করে নির্মল প্রকৃতিকে অশান্ত করে ।পিতা -মাতার ভালোবাসার প্রতিদানে উপহার স্বরূপ বৃদ্ধাশ্রমের অন্ধকার গলি ।আবার কোথাও পিতা -মাতা সন্তানকে মানুষ করছে টাকা ইনকামের যন্ত্র হিসেবে।যে ভালোবাসা স্বর্গ থেকে আসে ,সেই ভালোবাসায় শেষ পরিণতি প্রেয়সীর একমাত্র ঠিকানা গনিকাপল্লী , আবার কোথাও মায়ের কোল খালীকরে প্রেমিকের আত্মহত্যা। কোমল মনে নয় ; সুন্দর এক স্পর্শ বা দৃষ্টিতে নয় ভালোবাসা আজ বিকৃত চোখের চাহনিতে !!! বর্বরোচিত অভিনয়ের মায়াজালে ভালোবাসা বন্দি । তরলের তরঙ্গে পেম আজ এক আর্তনাদের বিভীষিকা।

“আমি কবি হতে আসিনি ,আমি নেতা হতে আসিনি ।
আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম ,প্রেম পেতে এসেছিলাম ।যে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরবে অভিমানে চির দিনের জন্য বিদায় নিলাম ।”

********নজরুল ইসলাম**********

যে ভালবাসা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ।সেই ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট দিন থাকতে পারে না , প্রতিটি দিন, প্রতিটি মূহুর্ত ভালোবাসার জন্য ।তথাপি ১৪ফেব্রুয়ারীতে ভালোবাসা দিবস পালিত হয় ।এই দিনটিতে প্রেমিক প্রেমিকা সেজেগুজে বেরিয়ে পড়ে পেম নিবেদন করতে । সারাদিন পার্কে বসে নতুবা সিনেমা হলে ,অথবা নির্জন নিহারিকাতে ।চলে ভালোবাসার নামে যথেচ্ছাচার, নেশাগ্ৰস্ত হয়ে যৌন সুখ পেতে লাগামছাড়া বেলেল্লাপনামি ।হাজার হাজার তরুণী নিরবে ধর্ষিত হয় ,কোন কোন তরুনীর নিথর দেহ পাওয়া যায় । কোথাও বা তরুনের মর্মান্তিক পরিণতি।এ পৃথিবী আজ মনুষ্যত্বের জলাঞ্জলি দিয়ে প্রকৃত ভালোবাসার গায়ে কালিমা লেপন করেছে ।প্রকৃত অর্থে ভ্যালেন্টাইন দিবসের গায়ে কালিমা লেপন করেছে । ঐতিহাসিক ভ্যালেন্টাইন দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম, শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা উচিত ।২৬৯খ্রীষ্টাব্দের রোম পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্য ছিল ।রোমের রাজা দ্বিতীয় ক্লোরিয়াস এক নিষ্ঠুর , অত্যাচারী রাজা ছিলেন । তিনি সমিক্ষা করে দেখেন বিবাহিত পুরুষদের চেয়ে অবিবাহিত পুরুষেরা বলবান বা শক্তিশালী । সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করেন সাম্রাজ্যের কোন পুরুষ আর বিবাহ করতে পারবেনা । তৎকালীন খৃষ্টান প্রাদ্রী সেন্ট ভ্যালেন্টাইন বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ।ফলে রাজা ক্লোরিয়াস ভ্যালেন্টাইনকে জেলে বন্দি করেন ।যে জেলে বন্দি ছিলেন ভ্যালেন্টাইন সেই জেলারের একটি অন্ধ কন্যা ছিল ।জেলারের অনুরোধে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়ের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন । ভ্যালেন্টাইন এর প্রার্থনায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায় । দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেলে মেয়েটি জেলে ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে আসে এবং প্রথম দেখাতেই একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়।পড়ে উভয়ে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হন ।ক্লোরিয়াসের কানে এই সম্পর্কের কথা পৌছানো মাত্র ভ্যালেন্টাইনকে ফাঁসির আদেশ দেয় ।২৬৯খ্রীষ্টাব্দের ১৪ফেব্রুয়ারী ফাঁসি হয় ভ্যালেন্টাইনের ।ফাঁসির পূর্বে ভ্যালেন্টাইন একটি পেম পত্র লেখেন ,যার উপরে লেখা ছিল” ফ্রম ইয়োর ভ্যালেন্টাইন “।৪৯৬ খ্রীষ্টাব্দে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম ১৪ফেব্রুয়ারীকে ভ্যালেন্টাইন ডে তথা ভালোবাসার দিবস ঘোষণা করেন।১৮৪০সালে বানিজ্যিক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর সর্বত্র । পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ভ্যালেন্টাইন কার্ডটি সংরক্ষিত আছে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে।সেই ভ্যালেন্টাইনের গায়ে আজ কালিমা লেপন করা চলছে অহরহ । প্রেমের নামে ঘটছে অহরহ অনাচার -ব্যভিচার -অশ্লীলতা । ভালোবাসা আজ যাতনাময় , ভালোবাসা আজ প্রবনচনা ময় ।ভালোবাসা মানে কি হাতে হাত রেখে পার্কে ঘোরা ? ভালোবাসা মানে কি কোলে মাথা রেখে শুয়ে গল্প করা ? ভালোবাসা মানে কি প্রেমিকের টাকার ধ্বংস করা ? ভালোবাসা মানে কি যৌন মিলন ?

“প্রেম হল সিগারেটের মতো ,যার আরম্ভ হল অগ্নি দিয়ে ।
আর শেষ পরিণতি ছাই দিয়ে ।”
**************জর্জ বার্নাড শ ******

যে প্রেমে পড়লে সকলেই কবি হয়ে ওঠেন ,যে প্রেমের মহিমা অপার সম্ভাবনাময় ।যে প্রেম নির্মল , শাশ্বত , সুন্দর ও অমলিন ।যে প্রেম দুটি আত্মার নির্মল আত্মীয়তা ।যে প্রেমে নৈস্বর্গিক শোভা বিরাজমান ।সেই প্রেমকে জর্জ বার্নাড শ তুলনা টানলেন ছাইয়ের সাথে । ভালোবাসাকে দাড়িপাল্লায় ওজন করলে যাতনাময় হবেই ।। সত্যিকারের ভালবাসাকে দাড়িপাল্লায় ওজন করা যায় না । ওজন করা ভালোবাসা আজ কলুষিত হয়েছে । সুতরাং সত্যিকারের প্রেমের অমরাবতী রচনা করতে গেলে ভালোবাসার জন্য কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে নেয়া মুলত ভালোবাসাকে সংকীর্ণ করে ফেলার সামিল । সুতরাং প্রতিদিন , প্রতিমূহুর্ত হোক ভালোবাসার । ভালোবাসা চোখে দেখা য়ায় না একমাত্র অন্তরের অন্তঃস্থলে অনুভব হয় সেই ভালোবাসা যে বিশ্বাসের গরবে গরবিনী।দুটি আত্মা একে অপরের প্রতি বিশ্বাস , সম্মান প্রদর্শন করে এক স্বার্থহীন , নির্ভেজাল , পরিশীলিত আত্মীয়তার বন্ধন‌ই হোক ভালোবাসার প্রতীকী প্রতীক।দুটি আত্মা হোক এক এবং অভিন্ন। বিশ্বাস হোক প্রশ্নাতীত ।থাকবে না চাওয়া পাওয়া দ্বন্দ্ব ।থাকবে না প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার বাসনা । নারী বা যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু যেন প্রেমকে কলুষিত না করে । সত্যিকারের ভালোবাসা সবার ইহকালে অনাবিল আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে না , কিন্তু পরকালের জন্য অটুট রাখতে ভালোবাসাকে স্বর্গীয় করে রাখতেই হবে। মানবতার জন্য ভালোবেসে যেতে হবে । প্রকৃত ভালোবাসা উদার হতে শেখায়। সত্যিকারের ভালোবাসা অশান্ত পৃথিবীর জরাজীর্ণতা দূর করে সুন্দর পরিবার ,সমাজ, সংস্কৃতি দেশ তথা পৃথিবী উপহার দিতে পারে ।নির্মল- নিষ্কলুস -পবিত্র ভালোবাসায় এই পৃথিবী হবে অনিন্দ্য সুন্দর প্রেমের অমরাবতী। সকলের অন্তরে ভালোবাসা শাশ্বত হয়ে থাকবে।

( জঙ্গি হামলায় নিহত ভারতীয় জোয়ানদের দেশপ্রেম অমর হয়ে থাকবে । সকলের আত্মার শান্তি কামনা করি। পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।)

Loading

Leave A Comment